“মনোরমা পাশ ফিরে তাঁর শীর্ণ হাত বাড়িয়ে নাতনিকে জড়িয়ে ধরলেন । লোমচর্ম শরীরেও যে উত্তাপ থাকে তা দীপাবলীকে আশ্বস্ত করলো । তার মনে হলো বাইরের পুরুষদের সঙ্গে লড়াই করলেই যা পাওয়া যায়না নিজের মনের অন্ধকার সরালে তা পাওয়ার পথ পরিষ্কার হয় । সে মনোরমাকে আঁকড়ে ধরল । দীর্ঘ বয়সের ব্যবধান স্বত্তেও পরস্পর যেন একাত্ম ।”
“একটি একা মেয়ে ইচ্ছে করলেই বাজার যেতে পারে, ডাক্তার এর সঙ্গে দেখা করে ওষুধ আনতে পারে । কিন্তু এসব করণীয় কাজ কেউ আন্তরিকতার সাথে করে দিলে একধরনের আরাম হয় । মনের আরাম । অলোকের কথা মনে পড়ে গেল তার ।ইচ্ছে করলেও মানুষটাকে ভুলে থাকতে পারেনা সে । সম্পর্কে যতই মতবিরোধ হোক, মানুষের সঙ্গে থাকার একধরনের যে সাহচর্যের আরাম আছে --- এ সবই এই একজীবনের জন্য মনের গায়ে গাঁথা হয়ে রইলো । অলোক আর কিছু না হোক খুব ভালো বন্ধু হয়েও তো থাকতে পারত ।”
“বাচ্চা নিতে একটুও আপত্তি ছিলনা দীপাবলীর । পরে অলোক নিজেই ঠিক করলো আরো বছর দুয়েক অপেক্ষা করবে সে । আরেকটু ভালোভাবে গুছিয়ে নিত চায় সব । এখন সেসব পালা চুকে গেছে ।আজ দীপাবলীর হঠাৎ মনে হলো তার সামনে শুধুই শুন্যতা ।এ জীবনে আর কখনই শিশুর জননী হতে পারবেনা সে । কে জানে হয়ত তার ভেতরে একটা লজ্জাকর অক্ষমতা ছিল, যা প্রকাশ পেলনা এ জীবনের মত ।”
“সাহিত্যের জগৎটিকে আমি যেভাবে আবিষ্কার করেছি সেটা আমার জন্য খুব একটা সুখকর অভিজ্ঞতা হয় নি। এ জগতের অধিকাংশ লোককে আমি যেভাবে চিনেছি সেটা আমার একেবারেই ভালো লাগে নি…আমি এই জগৎটির সঙ্গে এত গভীরভাবে সম্পৃক্ত ছিলাম যে, বহু লেখকের হাঁড়ির খবর আমার জানা হয়ে গিয়েছিলো। মানুষ হিসেবে যে এঁরা কতটা অসৎ, ভণ্ড, বদমাশ হতে পারে তা আমি দেখেছি।...লেখালেখি বিষয়টি একজন লেখকের কাছে সবচেয়ে কোমল আর সূক্ষ্ম অনুভূতি দাবি করে, সবচেয়ে গভীর মনোযোগ দাবি করে, আমার তো এ-ও মনে হয় যে, ধ্যান-মগ্নতা ছাড়া একজনের পক্ষে লেখকই হওয়া সম্ভব নয়। তো সতীর্থদের নোংরামি দেখে, ভণ্ডামি দেখে, বদমায়েশি দেখে কি একজন প্রকৃত লেখকের আহত হওয়ার কথা নয়?”
“আগুন পোড়ালে তবু কিছু রাখেকিছু থাকে,হোক না তা ধূসর শ্যামল রঙ ছাই,মানুষে পোড়ালে আর কিছুই রাখে নাকিচ্ছু থাকে না,খাঁ খাঁ বিরান..”
“কারণ হৃদয় একটাই। বড় গতিপ্রিয় হয় এই বস্তু, বড় স্পর্শকাতর।শুধায়, মনে আছে একবার বৃষ্টি নেমেছিল? সেই বৃষ্টির ফোঁটাকে মনে হয় তোমার পায়ের শব্দপাতার শব্দকে মনে হয় তোমার গাড়ীর আওয়াজ...”